রিক্সাওয়ালা
লিখেছেন লিখেছেন মুমতাহিন প্রমিত ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৫৫:৪৬ রাত
১.
টিলাগড়
থেকে জিন্দাবাজার
যাব।
রিক্সা ছাড়া গতি নাই।
সিলেটের
রিক্সাওয়ালারা বরাবরই
ফাযিল।
ভাড়া বেশি চায়।
তবে প্যাসেন্জার যখন
প্রমিত, তখন
ভাড়া বেশি নেওয়া কঠিন
ব্যাপার বৈকি। বহু
ঝামেলা করে একটা রিক্সা পেলাম।
রিক্সাচালক ৬৫
বছরেরও অধিক বুড়ো।
যার বিবেক আছে,
এরকম বৃদ্ধের
রিক্সায় সে উঠবে না।
উপায় নাই, তাই
উঠলাম। বৃদ্ধ
আধা ঘন্টারও
বেশি সময়
ব্যায়ে আমাকে জিন্দাবাজার
পৌছে দিল।
রিক্সা থেকে নামার
পর বৃদ্ধের চেহারার
দিকে তাকিয়ে ভীষণ
আঘাত পেয়েছিলাম।
দেশ স্বাধীন হয়েছে,
সেই সাথে অসভ্যও
হয়েছে। নইলে আমাদের
সমাজে এই বৃদ্ধ আজ
সুখে শান্তিতে জীবনের
শেষ কটা দিন
কাটাতে পারতেন।
বৃদ্ধকে ২০ টাকার
বদলে ৪০
টাকা দিয়ে আমি দৌড়ে শুকরিয়ার
ভেতর ঢুকে গেলাম।
২.
হরতাল আজ। আগের
দিন উপশহরে মামার
বাসায় চলে এসেছি।
মামাদের ছাদ
থেকে রাস্তার দৃশ্য
ভালই দেখা যায়।
তো ছাদে দাড়িয়ে আছি।
চোখ আটকে গেল
পাশের বাড়ির ছাদে।
সুন্দরি একটা মেয়ে ছাদে কাপড়
মেলছে। পাত্তা দিলাম
না। হঠাত্ রাস্তায় চোখ
গেল। আবার অনেকদিন
পর সেই বৃদ্ধ
রিক্সাওয়ালাকে দেখলাম।
এ কয়দিনে স্বাস্থ্যের
আরও অবনতি হয়েছে।
একটা ব্লকের ভেতর
থেকে চার পাঁচজন
ছেলে দৌড়ে এল বৃদ্ধের
দিকে। হরতালের দিন,
রিক্সা থেকে তাঁকে নামিয়ে ওরা রিক্সায়
আগুন ধরিয়ে দিল।
বৃদ্ধকে একটা থাপ্পরও
মারল, বৃদ্ধ
মাটিতে পড়ে গেলেন।
আমি তীব্র
লজ্জা আর
কষ্টে দৌড়ে ঘরের
ভেতর ফিরে এলাম।
৩.
আরও কয়েকদিন পরের
ঘটনা। এখন
আমি আখালিয়ায়
থাকি। তবুও
এমসি কলেজের ছাত্র
হওয়ায় টিলাগড়ের
সাথে আমার আত্মার
বন্ধন। তো আবার
টিলাগড় গেছি।
ব্যাপারটা এত
কাকতালীয়
যে কি বলব। আবার ওই
বৃদ্ধ
রিকশাওয়ালাকে দেখলাম।
সেদিনের
ঘটনাটা মনে পড়ল। এত
ঝড় ঝাপটার পরও বৃদ্ধ
ভেঙে পড়েন নি।
স্বাস্থ্যের আরও
অবনতি হয়েছে। তবুও
জীবন যুদ্ধে হেরে যান
নি। এই প্রথম বোধহয়
জীবনে একজন
বাংলাদেশী হিসেবে আমার
গর্ব হল।
হে বৃদ্ধ,তুমি আছ
বলে আজও জীবিত
আছে আমার মাতৃভূমি।
গর্ব চূর্ণ হল
পরমূহুর্তে,
একটা ছেলে যখন
ভাড়া নিয়ে বিতন্ডা হওয়ায়
কষে একটা থাপ্পর দিল
বৃদ্ধের গালে। এবার
নিজেকে সামলাতে পারলাম
না। ইচ্ছে করল, ওই
ছেলেটার
কলিজা টেনে বের
করে ফেলি। কিন্তু
কাছে থাকা বন্ধু
আমায় বাধা দিল।
কারণ, ওই থাপ্পরম্যান
ছেলেটা রাজনৈতিক
ক্যাডার। ওর
সাথে আমি পেরে উঠব
না। আবার লজ্জায়
মাথা নিচু করলাম।
৪.
ওই বৃদ্ধ আজও
বেঁচে আছেন
কিনা জানি না।
না থাকাই উচিত,
বাঁচলে এ দেশে আরও
চড় থাপ্পর
খেতে হবে ওনাকে।আর
আমাদেরও
লজ্জা পেতে হবে। এমন
দেশটি কোথাও
খুঁজে পাবে না কো তুমি.................
বিষয়: সাহিত্য
৯৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন